রবিউল হুসাইন: বাঙ্গালি আর কিছু পারুক আর নাই পারুক নিময় ভাঙ্গায় ওস্তাদ। এমন ভুড়িভুড়ি উদাহরন দেয়া যাবে। যেমন ধরুন কোন দেয়ালে লেখা আছে এখানে পোস্টার লাগানো নিষেধ দেখবেন সেখানেই বেশি বেশি পোস্টার লাগানো হয়েছে। আবার দেখবেন কোথাও সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে এখানে ময়লা ফেলা নিষেধ দেখা যায় সেখানেই ময়লার স্তুপ। এছাড়া যে জায়গায় লেখা থাকে এখানে প্রসাব করা নিষেধ সেখানেতো অবস্থা ভয়াবহ নাক চেপে হাঁটতে হয়। যাই হোক উদাহরনের শেষ নেই, মূল কথায় আসা যাক। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ঘোষনা দিয়েছেন অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতে রাস্তায় বের না হন কিংবা জনসমাগম না করেন। এটা কি সরকারের লাভের জন্য করেছেন নাকি জনগনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য করেছেন? নিশ্চিই জনগনের সুরক্ষার জন্য। কিন্তু এ ঘোষনার পরও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে তেমন কোন বোধোদয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নিজের সুরক্ষার ব্যাপারে বাঙ্গালির চেয়ে এত উদাসীন জাতি পৃথিবীতে বোধ হয় আর নেই। চায়ের দোকান গুলোতে এখন আগের চেয়ে মানুষের ভিড় যেন বেড়েছে। বাসায় টেলিভিশন আছে সেটা রেখে খবর দেখছেন চায়ের দোকানে বসে এতে সৃষ্টি হচ্ছে জনসমাগম। অপরদিকে এক শ্রেণির মানুষ করোনা থেকে মুক্তির আশায় বিভিন্ন স্থানে খিচুরী রান্না করে সদলবলে ভূড়িভোজের আয়োজনে ব্যস্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন এ ধরনের ছবি হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। খিচুরী রান্না করলে যদি ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলতো তাহলে সারা বিশ্বে খিচুরী রান্নার ধুম পড়ে যেত। খিচুরী রান্নার নামে জনসমাগম করা কখনোই কাম্য হতে পারে না। নিত্যপণ্য, ঔষধ ও মুদি দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকান বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হলেও আদতে অনেক দোকানই খোলা রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু দোকান খোলার ধরন দেখে মনে হয় রমজান মাস বোধহয় এসে গেছে। দোকানের ঝাঁপ ফেলে একটু ফাঁকা রেখে খুলে রাখছেন দোকানিরা। পাশাপাশি অতি প্রয়োজন ছাড়াও রাস্তা ঘাটে বহু মানুষ হাঁটা চলা আর আড্ডায় মশগুল। সরকার জনগনকে নানা ভাবে ঘরে থাকার উপকারিতা বুঝালেও কে শোনে কার কথা। সরকার ছুটি দিয়েছেন আর সবাই এখন ঈদের আনন্দে বিভোর। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা না দিলে বুঝাই যেত না জাতি হিসেবে আমরা কতটা অসচেতন।
তবে এর বাইরেও একটি কথা আছে সেটি হচ্ছে আমাদের দেশের শ্রমজীবি মানুষ, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কাজ করলে পেটে ভাত জোটে না করলে না খেয়ে থাকতে হয়। তাদের ব্যাপারে সরকারের অতিসত্তর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজের সামর্থবান ব্যক্তিরা তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন কর্তব্য। কোন ব্যবস্থা না করে তাদের রাস্তা থেকে পিটিয়ে বাড়ি পাঠানোটাও অমানবিক।
অপরদিকে দেশের এমন দূর্যোগময় সময়ে প্রশাসন করোনা মোকাবেলায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে নাকি লোকজনকে ঘরে পাঠানোর দায়িত্ব পালনে সময় নষ্ট করবেন। আমরা জাতি হিসেবে এতটাই দূর্ভাগা যে প্রশাসন আর পুলিশ দিয়ে আমাদের ঘরে পাঠাতে হয়। আমরা কি নিজেরা ঘরে অবস্থানের মাধ্যমে প্রশাসন তথা সরকারকে এ পরিস্থিতিতে সহায়তা করতে পারি না? পাশাপাশি এ কটা দিন ঘরে থেকে নিয়ম পালনের চর্চাটাও রপ্ত করতে পারি। নিয়ম ভাঙ্গার ব্যাপারে বাঙ্গালির যে বদনাম আছে আসুন না এ সুযোগে সেটা ঘুচিয়ে ফেলি।
লেখকঃ সম্পাদক, চারদিক